Thursday 4 June 2020

ধরাছোঁয়ার বাইরে কৃষক আমানউল্লাহর মূল হত্যাকারীরা : কুমিল্লার সময়




  
 লালমাই (কুমিল্লা) প্রতিনিধি 
কৃষক আমানউল্লাহ(৬৫) । মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণের প্রতিবাদ করায় প্রকাশ্য দিবালোকে আছড়ে হত্যা করা হয়েছে তাকে। পরিবার ও এলাকার মানুষের সামনে দিনের আলোয় দুমড়ে আছড়ে গুরুতর আহত করার দৃশ্য দেখেছে মানুষ । মধ্যযুগীয় বর্বর ও অবিশ্বাস্য এমন হামলা সমাজের মানুষের হৃদয় কাঁপিয়ে দিয়েছে।

গত ১৮ এপ্রিল এমন ঘটনার পর প্রায় দেড় মাস হয়ে গেলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন এ হত্যাকাণ্ডের মূল আসামী স্হানীয় ইউপি মেম্বার দেলোয়ার হোসেন দেলু গংরা। ইতোমধ্যেই,তোফাজ্জল, রবিউল, বিল্লাল, নামে তিনজনকে গ্রেফতার করা হলেও গ্রেফতার করা যায়নি মূল হোতাদের। স্থানীয়রা বলছেন, মূল অপরাধীদের পেছনে শক্তিশালী রাজনৈতিক আশ্রয় থাকায় মূল অপরাধীরা পূর্বে বিভিন্ন অপরাধ করেও পার পেয়ে গেছেন।

অন্যদিকে পুলিশ বলছে, তারা সর্বশক্তি দিয়েই আমানউল্লাহ হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে হত্যাকাণ্ডের দেড় মাসেও মূল আসামি দেলোয়ার হোসেন দেলু মেম্বার,  সোহাগ , তোফায়েল, মাহাবুল হককে গ্রেফতার করতে পারেনি। 

জানা যায় গত ১৭ এপ্রিল মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় শূন্যে তুলে আছাড় মেরে কৃষক বাবাকে হত্যা করেছেন এক ইউপি সদস্য। গত ১৭ এপ্রিল শুক্রবার কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ইছাপুরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শনিবার ১৮ এপ্রিল ওই কৃষক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

প্রত্যক্ষদর্শী, নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামের কৃষক আমান উল্লাহর এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েকে কিছুদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক ও ইউপি মেম্বার দেলোয়ার হোসেন মজুমদারের ছোট ভাই কাঠমিস্ত্রী সোহরাব।

গত ১৬ এপ্রিল রাত ১১টায় দিকে সোহরাব আমান উল্যাহর বাড়িতে গিয়ে তার মেয়েকে ডাকাডাকি শুরু করে। এসময় আমান উল্যাহ ও তার ছেলেরা চোর চোর বলে চিৎকার দেয়। তাদের চিৎকার শুনে আশেপাশের বাড়ির লোকজন বেরিয়ে আসে।

খুঁজতে গিয়ে সবাই দেখে সোহরাব বাড়ির পাশের ধান খেতে শুয়ে আছে। এসময় তাকে ধরে উত্তম মধ্যম দেয়।
এখবর পেয়ে সোহরাবের ভাই দেলোয়ার মেম্বারের নেতৃত্বে ১০/১২জন রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমান উল্যাহর বাড়িতে হামলা করে।  

পরদিন ১৭ এপ্রিল দুপুরে গ্রামের গণ্যমান্যদের আমান উল্যাহ বিষয়টি জানায়। গ্রামবাসীকে জানানোর কারণে দুপুরে দেলোয়ার মেম্বারের নেতৃত্বে তার ভাইসহ কয়েকজন আমান উল্যাহকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়।

ঘর থেকে বের করার সময় দেলোয়ার মেম্বার আমান উল্যাহকে শূন্যে তুলে মাটিতে আছাড় দেয়। এরপর সবাই মিলে তাকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে ইছাপুরা গ্রামের শহীদের বাড়ির সংলগ্ন সড়কের পাশে ফেলে দেয়।  
পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। এঘটনায় আমান উল্যাহর ছেলে আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ওই দিন বিকালে দেলোয়ার মেম্বারসহ এজাহারভুক্ত ৪জন ও অজ্ঞাতনামা ৭/৮জনের বিরুদ্ধে লালমাই থানায় মামলা দায়ের করেন।  

গত ১৮ এপ্রিল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় লালমাই থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ইছাপুরা গ্রামের ফজর আলীর ছেলে তোফাজ্জল ও আজগর আলীর ছেলে রবিউলকে আটক করে।  

নিহতের ছেলে ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবদুল জলিল সাংবাদিকদের বলেন, খুনিরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে আসামীরা গ্রেফতার হচ্ছে না। আমার বোনকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় দেলোয়ার মেম্বারের নেতৃত্বে আমার বাবাকে খুন করা হয়েছে। আমরা খুব শীঘ্রই খুনি দেলুসহ তার ভাইদের গ্রেফতার ও ফাঁসি চাই। 
 
লালমাই থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, নিহতের ছেলে আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গত ১৮ এপ্রিল সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিমের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা শাহবাগ থানার মাধ্যমে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করি। দায়েরকৃত মামলায় ৩০২ ধারা সংযুক্তের জন্য আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ করি। এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করেছি। ইউপি মেম্বার দেলোয়ারসহ বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

আসামীদের গ্রেফতারে লালমাই সহ পাশ্ববর্তী সকল জেলা ও উপজেলায় নজরদাড়ির ব্যবস্থা জোরদাড় করা হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ ও সাদাপোশাকধারী পুলিশের নজরদাড়িও বাড়ানো হয়েছে।

No comments:

Post a Comment