Tuesday 7 January 2020

আজ বঙ্গবন্ধুর কারামুক্তির দিন : কুমিল্লার সময়


 
আজ ঐতিহাসিক ৮ জানুয়ারি। ১৯৭২ সালের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের বন্দি শিবির থেকে টানা ৯ মাস কারাভোগের পর মুক্তিলাভ করেন। এরপর থেকেই দিনটি ‘বঙ্গবন্ধুর কারামুক্তি দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
১৯৭১-এর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকহানাদার বাহিনীর গণহত্যা চলাকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের নিজ বাসভবন থেকে গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরে তাকে পাকিস্তানের মিলানওয়ালী কারাগারে নির্জন কক্ষে বন্দি অবস্থায় রাখা হয়। বিচ্ছিন্ন রাখা হয় পত্রপত্রিকাসহ গোটা বিশ্ব থেকে। এভাবেই চলতে থাকে তার জীবন।

১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখনো পাক বাহিনীর কারাগারে বন্দি। পরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যাপক কূটনৈতিক চাপ এবং বিশ্ব শীর্ষ নেতাদের তীব্র সমালোচনার মুখে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

ওই দিন জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে লাহোর বিমানবন্দর থেকে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ার লাইন্সের একটি বিশেষ বিমানে তুলে দেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একমাত্র সঙ্গী ছিলেন ড. কামাল হোসেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির খবর প্রথম প্রচার করে রেডিও পাকিস্তান। এতে বলা হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিয়ে লাহোর বিমানবন্দর থেকে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে তার গন্তব্য স্থল সম্পর্কে রেডিও পাকিস্তান কোনো খবর না দিয়ে অজ্ঞাত রাখে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তানি বন্দি শিবির থেকে বহুল প্রত্যাশিত মুক্তির খবর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লে ৮ জানুয়ারি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

এরপর লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুর অবতরণের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিবিসি টেলিভিশন তাদের নিয়মিত অনুষ্ঠান স্থগিত করে তার অবতরণের খবর লাইভ প্রচার করে। সেখানে বঙ্গবন্ধুকে গলা খোলা সাদা শার্ট এবং ধূসর রঙের স্যুট পরা অবস্থায় দেখা যায়। হাসিমুখে তিনি বলছেন, ‘আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বন্দি শিবির থেকে মুক্তি পেয়ে রীতিমতো বেঁচে আছি’।

এসময় বৃটেনের তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও লেবার পার্টির প্রধান হ্যারল্ড উইলসন (পরবর্তীতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী) এবং বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা জানান। পরে ব্রিটেন বিমানবাহিনীর একটি বিমানে তিনি দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে নামেন দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, মন্ত্রিসভা, তিন বাহিনীর প্রধান সহ উপস্থিত জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন। এরপর ফেরেন ঢাকায়। সিক্ত হন দেশের মানুষের ভালোবাসায়।

No comments:

Post a Comment