Sunday 5 January 2020

পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই পাহাড় কাটছে কুবি প্রশাসন : কুমিল্লার সময়




কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বিভিন্ন ভবন দাঁড়িয়ে আছে উঁচু-নিচু লাল পাহাড়ের ওপর। এ লাল পাহাড়ই যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক গুণ। কিন্তু এসব লাল পাহাড়গুলোই যেন কেটে সাবাড় করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সমাবর্তনকে সামনে রেখে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠ সংলগ্ন পাহাড় কাটছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে করে পরিবেশ বিপন্নের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টি হারাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রাক্টরে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রমিকরা পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছেন। পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে কেন্দ্রীয় মাঠের বিভিন্ন জায়গা সমান করছেন তারা। এর আগেও পাহাড়টি কাটা হয়েছে। বর্তমানে পাহাড়ের নিচের অংশ বেশি কাটার ফলে যেকোনও সময় পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের পশ্চিম পাশের পাহাড়ের একটি অংশ মেশিনের সাহায্যে কেটে ফেলেছে। সেই মাটি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে নির্মাণাধীন সড়কদ্বীপ ও ডরমিটরির নিচু স্থান ভরাট করেছে।আগামী ২৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে কেন্দ্রীয় মাঠে। সমাবর্তনকে সামনে রেখে মাঠের উত্তর পাশের পাহাড় কেটে ট্রাক্টর দিয়ে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছে প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্যের সভাপতি রিজওয়ান কবীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই। লাল পাহাড় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য। এগুলোকে রক্ষা করা প্রশাসনের দায়িত্ব।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইনের ২০১০-এর ৬-এর ‘খথ ধারায় বলা হয়েছে ‘কোনো পাহাড় বা টিলা কর্তন বা মোচন করা যাইবে না, তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণক্রমে পাহাড় কর্তন করা যাইবে।থ আইনে পাহাড় বা টিলা কাটার জন্য ছাড়পত্রের বিধান থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের সদ্য সাবেক উপপরিচালক কামরুজ্জামান সরকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই পাহাড় কেটেছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আবুল ফজল মীর বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়ে জেলা প্রশাসন থেকে কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি।

পাহাড় কাটার দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল লতিফ বলেন, প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করা হচ্ছে। পাহাড়ের নিচের অংশ কেটে এখানে ড্রেনের লাইন করা হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, সমাবর্তনের মাঠকে প্রস্তুত করার জন্য পাহাড়ের নিচে মাটির যে অংশটুকু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তা পরিস্কার করতে বলা হয়েছে। তাছাড়া নিচু জায়গা ভরাট করার কথাও বলা হয়েছিলো কিন্তু পাহাড় কেটে নষ্ট করতে বলা হয়নি। আমি এ বিষয়ে তাদের সাথে কথা বলছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘পাহাড় কাটার অনুমতি আমি দেইনি, আমাকে জানিয়ে পাহাড় কাটা হয়নি।

No comments:

Post a Comment