Friday 1 May 2020

লালমাইতে হত্যা মামলার পলাতক আসামি গ্রেফতার : কুমিল্লার সময়






প্রদীপ মজুমদার : কুমিল্লার লালমাই উপজেলার চাঞ্চল্যকর কৃষক আমানউল্লাহ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বিল্লাল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে লালমাই থানা পুলিশ। ১লা মে শুক্রবার বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আত্মগোপনে থাকা পাশ্ববর্তী চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রাম থেকে এস আই আরিফুজ্জামান আরিফের নেতৃত্বে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালমাই থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আইউব। 

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল মেয়েকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় শূন্যে তুলে আছাড় মেরে কৃষক পিতাকে হত্যা করে স্হানীয় ইউপি মেম্বার দেলোয়ার হোসেন দেলু গংরা। গ্রেফতারকৃত আসামি এই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি দেলু মেম্বারের ভাই। ঘটনার পর থেকে আসামি  বিল্লাল পলাতক ছিলেন।

এদিকে আসামী বিল্লালকে চৌদ্দগ্রামের গজারিয়ায়  গ্রেফতার করতে গেলে ওই গ্রামের টিপু মেম্বার তার দলবল নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়।  সেখানকার গ্রামবাসীর সহায়তায় ও চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের সহায়তায় বিল্লাল কে গ্রেফতার করে লালমাই থানা পুলিশ।  

লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আইউব  জানান, গ্রেফতারকৃত বিল্লাল আমানউল্লাহ হত্যা মামলার ২নং আসামি। অন্য আসামিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ঘটনার বিবরণঃ
-----------------------
মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় শূন্যে তুলে আছাড় মেরে কৃষক বাবাকে হত্যা করেছেন এক ইউপি সদস্য। গতকাল শুক্রবার কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ইছাপুরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গত শনিবার ওই কৃষক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

প্রত্যক্ষদর্শী, নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামের কৃষক আমান উল্লাহর এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েকে কিছুদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক ও ইউপি মেম্বার দেলোয়ার হোসেন মজুমদারের ছোট ভাই কাঠমিস্ত্রী সোহরাব।

গত ১৬ এপ্রিল রাত ১১টায় দিকে সোহরাব আমান উল্যাহর বাড়িতে গিয়ে তার মেয়েকে ডাকাডাকি শুরু করে। এসময় আমান উল্যাহ ও তার ছেলেরা চোর চোর বলে চিৎকার দেয়। তাদের চিৎকার শুনে আশেপাশের বাড়ির লোকজন বেরিয়ে আসে।

খুঁজতে গিয়ে সবাই দেখে সোহরাব বাড়ির পাশের ধান খেতে শুয়ে আছে। এসময় তাকে ধরে উত্তমমধ্যম দেয়।
এখবর পেয়ে সোহরাবের ভাই দেলোয়ার মেম্বারের নেতৃত্বে ১০/১২জন রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমান উল্যাহর বাড়িতে হামলা করে।  

পরদিন ১৭ এপ্রিল দুপুরে গ্রামের গণ্যমান্যদের আমান উল্যাহ বিষয়টি জানায়। গ্রামবাসীকে জানানোর কারণে দুপুরে দেলোয়ার মেম্বারের নেতৃত্বে তার ভাইসহ কয়েকজন আমান উল্যাহকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়।

ঘর থেকে বের করার সময় দেলোয়ার মেম্বার আমান উল্যাহকে শূন্যে তুলে মাটিতে আছাড় দেয়। এরপর সবাই মিলে তাকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে ইছাপুরা গ্রামের শহীদের বাড়ির সংলগ্ন সড়কের পাশে ফেলে দেয়।  
পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। এঘটনায় আমান উল্যাহর ছেলে আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ওই দিন বিকালে দেলোয়ার মেম্বারসহ এজাহারভুক্ত ৪জন ও অজ্ঞাতনামা ৭/৮জনের বিরুদ্ধে লালমাই থানায় মামলা দায়ের করেন।  

শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় লালমাই থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ইছাপুরা গ্রামের ফজর আলীর ছেলে তোফাজ্জল ও আজগর আলীর ছেলে রবিউলকে আটক করে।  

নিহতের ছেলে ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবদুল জলিল সাংবাদিকদের বলেন, সোহরাবের চরিত্র খারাপ হওয়ায় তার স্ত্রী চলে গেছে। বেশ কিছুদিন ধরে সে আমার বোনকে উত্ত্যক্ত করে আসছে। ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় দেলোয়ার মেম্বারের নেতৃত্বে আমার বাবাকে খুন করা হয়েছে। খুনি দেলুসহ তার ভাইদের গ্রেফতার ও ফাঁসি চাই। 
 
লালমাই থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, নিহতের ছেলে আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গত ১৮ এপ্রিল সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিমের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা শাহবাগ থানার মাধ্যমে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করি। দায়েরকৃত মামলায় ৩০২ ধারা সংযুক্তের জন্য আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ করি। এখন পর্যন্ত দুইজনকে আটক করেছি। ইউপি মেম্বার দেলোয়ারসহ বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

No comments:

Post a Comment